ঢাকা: রাজধানীর নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় আত্মঘাতী তিনজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জিএমবি) সদস্য। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তারা। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ঢাকায় একটি সেল গঠন করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে রুবি ভিলায় অভিযান চলানো হয়। অভিযানের সময় জঙ্গিরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে। পাল্টা জবাবে র্যাবও গুলি ছুড়ে। গোলাগুলিতে জঙ্গিরা নিহত হয় বলে জানান তিনি।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য জানান র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। এর আগে তিনি রুবি ভিলার যে ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছিল সেখানে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
তিনি জানান, আস্তানা থেকে দুইটি পিস্তল, তিনটি আইইডি, বিস্ফোরক জেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি লাশের নিচ থেকে একটি গ্রেনেড, গ্যাসের চুলার ওপর থেকে একটি গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
মুফতি মাহমুদ জানান, ওই বাসার ৫ ও ৬ তলায় ভাড়াটিয়ারা মেস করে থাকেন। ৫ তলার সবকটি ফ্ল্যাট মিলিয়ে ২১ জনের মতো লোক ছিলেন। এর মধ্যে জঙ্গিরা যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেখানে ৭ জন ছিলেন। নিহত ৩ জন ছাড়া বাকিরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। নিহতরা একটি কক্ষেই থাকতেন।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জাহিদ নামে এক জঙ্গি এই বাড়ি ভাড়া নিতে আসেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি ও তার ২ভাই একটি কক্ষে থাকার কথা বলেন। মাসিক ৫ হাজার ৩০০ টাকায় ওই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ ভাড়া নেন। ভাড়া বাবদ ২ হাজার টাকা ওইদিনই দিয়েছিলেন। ৪ জানুয়ারি জাহিদ একা বাসায় উঠেছিলেন। ৮ জানুয়ারি অন্য দুজন আসেন।’
ওই ফ্ল্যাটে যারা থাকতেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরে আসা দুজনকে বাসা থেকে বের হতে তারা দেখেননি বলে জানান তিনি।
মুফতি মাহমুদ জানান, বাড়ির মালিক সাব্বির হোসেন বিমানের ফ্লাইট অফিসার ছিলেন। বাড়ির ভাড়ার ব্যাপারে কেয়ারটেকার রুবেল দেখাশুনা করতেন। তিনিই বাসা ভাড়া দিয়েছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট শেষ হয়েছে। সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ব্যাপারে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।’
২০১৩ ও ২০১৬ সালে রুবি ভিলায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে র্যাব আটক করেছিল বলেও জানান মুফতি মাহমুদ।
এর আগে র্যাব মহাপরিচালক জানিয়েছিললেন, জঙ্গি আস্তানার ভেতরে একাধিক সুইসাইডাল ভেস্ট, পিস্তল, বিস্ফোরক, অবিস্ফোরিত ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও কিছু বাল্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যও পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পশ্চিম নাখালপাড়ার পুরাতন এমপি হোস্টেল সংলগ্ন ১৩/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের রুবি ভিলা ঘিরে ফেলে র্যাব। একপর্যায়ে ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে জঙ্গিরা। এ সময় র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ ঘটনায় র্যাবের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এর আগেই ওই ভবনের ৬৫ বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ/এমআরএস/এনএআর
Copyright 2018 All rights reserved