সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাঁচদফা দাবির আন্দোলনে দু'জন শিক্ষকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে ও তিনজন শিক্ষককে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবিসহ তিন দফা উপস্থাপন করেছে সংগঠনটি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২০ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির হার কমানো, আবাসন সংকট নিরসন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষার্থী বিষয়ক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তকরণ ও অবহিতকরণ এই পাঁচ দফা দাবি জানায়।
এ দাবি কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানোর পর আশানুরূপ কোন ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
প্রশাসনও এই দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন, যদিও পরবর্তীতে সেসব দাবি পূরণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যায় না। দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসন নিজেই তাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়েছে।
কিন্তু আন্দোলনের চাপ কমতে না কমতেই তারা স্বৈরাচারী কায়দায় শিক্ষার্থীদের কথা বলার অধিকারের টুটি চেপে ধরে। আন্দোলন চলাকালে প্রশাসনিক ভবন অবরোধের সময় দু’জন শিক্ষক গাড়ী নিয়ে অবরোধ উপেক্ষা করার ঘটনায় শিক্ষকের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়।
ঘটনার দেড় মাস পর তিনজন শিক্ষার্থীর কাছে তাদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কি তা জানতে চায় ও তাদের জবাব লিখিতভাবে দেবার সুযোগ চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। একইভাবে ঘটনার নয় মাস পর আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে বেছে বেছে চারজন শিক্ষকের নামে উসকানি দেবার অভিযোগ এনে শোকজ করে কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোর অপরাধে শিক্ষক আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অন্য দু’জন শিক্ষক শাকিলা আলম ও হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। বহিষ্কার হওয়া দু’জন শিক্ষার্থী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনশনে যায় বর্তমানে তাদের শারিরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে যে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কার্যকর রয়েছে, আমরা মনে করি আজকে সেই অগণতান্ত্রিক চর্চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এমন স্বৈরাচারী রূপ দিতে সাহায্য করেছে।
ফলে আজ তারা কোনো ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যও দিতে তারা ভুলে গেছে। এ রকম স্বৈরাচারী কায়দায় জ্ঞান চর্চা কোনদিন হয়নি, হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জায়গা। যেখানে নানা বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত জানাবে, শিক্ষকদের সাথে তাদের নানা ধরনের মিথস্ক্রিয়ার আয়োজন থাকবে, গবেষণার জন্য একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হবার, সংগঠিত হবার অধিকার থাকবে। আজকে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্বশাসনের ওপর শাসকাগোষ্ঠী চরম আঘাত হানছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে শাসক গোষ্ঠীর অনুগত লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে তৈরি করার চক্রান্ত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবিসমূহ হল-আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ ও শিক্ষকদের বরখাস্ত ও অপসারণের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ/নিহে