দু’পক্ষের মারামারিতে কোনও এক পক্ষের কেউ আহত হলে ‘মৃত্যুর সনদ জাল করে’ সুবিধা নিতে মামলা করতো অন্য পক্ষ। শুধু মৃত্যু সনদই নয়, আহত না হলেও আহতের মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতো। এছাড়াও কিছু টাকার বিনিমিয়ে জন্ম সনদ, অসুস্থতাজনিত ছুটির সনদ, বিদেশে যাওয়ার জন্য জাল মেডিকেল সনদ সরবরাহ করা হতো। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সংলগ্ন ঢাকা নার্সিং কলেজ থেকে এমনই একটি জাল সনদ প্রস্তুতকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ঢাকা নার্সিং ইনস্টিটিউটে অভিযান পরিচালনা করেন র্যাব-৩ এর মেজর জাহাঙ্গীর আলম। এসময় জাল সনদ প্রস্তুতকারী ঢাকা নার্সিং কলেজের ওয়ার্ড বয় আরিফ হোসেনকে ডাক্তারদের ভুয়া সিল, প্যাড ও সনদসহ আটক করা হয়।
অভিযান শেষে মেজর জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর পুলিশ যে ইনজুরি রিপোর্ট চায় সেই রিপোর্টগুলো এখান থেকে জাল করে সরবরাহ করা হতো। দালালচক্র কিছু টাকার বিনিময়ে অফিসের পক্ষ থেকে জাল সনদপত্র সরবরাহ করতো। এছাড়াও জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ এমনকি মেডিকেল সংশ্লিষ্ট যেকোনও ধরনের সনদ সরবরাহ করতো চক্রটি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা গেছে, কোনও মারামারির ঘটনা ঘটেনি কিংবা আহতের কোনও ঘটনাও ঘটেনি, তখন এই দালালচক্র ভুয়া মেডিকেল সনদ তৈরি করে এবং সেগুলো পরবর্তীতে বড় ধরনের প্রমাণ হিসেবে মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতো। এ ধরনের মামলার সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে।’
এ জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ব্যাপারে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কেউ জড়িত আছে কি-না। তবে আমরা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়কে আটক করেছি। তার সাথে আরও কয়েকজন জড়িত আছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজগুলো করার জন্য মেডিকেলের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে আতাত রাখতো চক্রটি। আজকের অভিযানে আমরা মেডিকেলের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।’
আটক ওয়ার্ড বয় ঢাকা নার্সিং কলেজের গ্যারেজের একটি রুমে থাকতেন। তার রুম থেকে অসংখ্য ডাক্তারদের ভুয়া সিল, প্যাড ও সনদপত্র জব্দ করেছে র্যাব।
ব্রেকিংনিউজ/টিটি/এমআর