রাজশাহী নগরীর মাস্টারপাড়া, পাইকারী সবজির বাজার। হাজারো মানুষের কোলাহলে ভেসে আসে এক নারীর কণ্ঠ। ‘গাজর ১০টাকা, বেগুন ১৫ টাকা। চরের টাটকা বেগুন মামা লিয়ে যান’। নারীর এমন আহবানে স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতাদের ফেরে তার দিকে। তিনি আর কেউ নন। সবজি বিক্রেতা মুন্নি খাতুন (২৬)। তার চোখে মুখে সংগ্রামের ছাপ স্পষ্ট। পাশেই তার শিশুপুত্র মুন্না ক্রেতাদের দিকে প্রদর্শন করে যাচ্ছে সবজি। সবজি বিক্রির আয় দিয়েই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চান। স্বামী সোলেমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১১ বছর ধরে মুন্নির সংসার চলছে এই সবজি বিক্রিতেই।
মুন্নি জানান সন্তানকে রেখে স্বামী চলে যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। তুবও তিনি হতাশ হননি। স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সবজি বিক্রি। পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করেন। এতেই তার প্রতিদিন লাভ থাকছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
মুন্নি আরও জানান, ১৪ বছর বয়সে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পরই তার বাবা মারা যান। এরপর এক সন্তানের মা হন তিনি। সন্তানের বয়স আড়াইমাস হলে স্বামী আরেকটি বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর মুন্নি সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। সেখানে মায়ের সঙ্গে অন্যের বাড়িতে কিছুদিন ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে কিছু পয়সা জমিয়ে শুরু করেন সবজির ব্যবসা। নগরীর বড় সবজি বাজার মাস্টার পাড়া থেকে পাইকারী সবজি কিনে মতিহার থানার বউ বাজার এলাকায় খুচরা বিক্রি শুরু করেন। এতে ভালো লাভ হতে থাকে। আরেকটু পুঁজি বাড়লে মাস্টার পাড়ায় সবজি কিনে সেখানেই বিক্রি শুরু করেন। এতে আরো বেশি লাভ হতে থাকে। তাকে সহযোগিতা করে তার ছেলে। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন এখন মুন্নি।
তিনি জানান, অভাবের কারণে তিনি ছেলে সময় দিতে পারছেন না। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। তবে আশা আশা আছে ছেলেকে তিনি পড়াশোনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করতে চান।
ব্রেকিংনিউজ/এমএইচ