সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনার পর ছাত্রাবাস বা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কোন কারণ ছাড়াই সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) তিতুমীর কলেজের আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসে ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে বনানী থানা ছাত্রলীগের দুই কর্মী।
দৈনিক অধিকারের ক্যাম্পাস প্রতিনিধিসহ দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় সাথে আরও দুই সাংবাদিক ছিলো। তার মধ্যে একজন নারী ফটোগ্রাফারও ছিলেন।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবে ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে এই প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেও বানানী থানার ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রাবাসে কি করছিলেন? নারী সাংবাদিক দেখে তারা তেড়েই বা আসলেন কেন?
জানা গেছে, হামলায় অংশ নেয়া শাহরিয়ার আল মামুন ও সাদেকুর রহমান রিজেন বানানী থানা ছাত্রলীগ কর্মী। শাহরিয়ার আল মামুন তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সাদেকুর রহমান রিজেন মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
বন্ধ ছাত্রাবাসে তারা কী করছেন? এর সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারেনি। তবে বনানী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ.এম মিরাজুল ইসলাম মাহফুজ শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন।
হামলায় অংশনেয়া ছাত্রলীগ কর্মী সাদেকুর রহমান রিজেনের কাছে এ বিষয়টি জানতে ফোন করলে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিক না কী আমরা জানি না। আমাদের ছোট ভাই তাই আমরা দুই-একটা চড়-থাপ্পর দিছি। এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভালো হবে না।
এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন উত্তর ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, আমরা এখনও কিছু শুনেনি- অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বহিষ্কার করা হবে।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটনাকে নিজেদের নয় বলে দাবি করেছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল। তিনি জানিয়েছেন, তাদের কেউ আমাদের কর্মী না। ছাত্রলীগ এ হামলার দায়ভার নিবে না। আপনারা আইনি ব্যবস্থা নিলে আমরা সহায়তা করব।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হামলার শিকার সাংবাদিক মামুন জানান, করোনার মধ্যে কলেজে একটি সরকারি চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আসি। পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গণজমায়েত করে পরীক্ষার হলে ঢুকছিল সেই ছবি ধারণ করে ছাত্রাবাসের সামনে যাই। এ সময় বন্ধ ছাত্রবাসের গেইটের ছবি তুলতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ছাত্রলীগ কর্মী আমাদের প্রতিহত করে। পরে আমরা সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরও বেশি উদ্ধত হয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল কেড়ে নেয়। মোবাইল চাইতে গেলে হামলা করে। পরে হামলাকারীরা ছাত্রাবাসের ভেতর চলে যায়।
এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি শামিম হোসেন শিশির বলেন, আমরা এ ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা সব সময় পারস্পরিক সৌহার্দ রেখে কাজ করে আসছি। করোনার মধ্যে পেশাগত কাজে এমন হামলার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। আশা করি কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন বলেন, এ সময় কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে থাকার কথা নয়। এটি খুবই নিন্দনীয় এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা। খোঁজ নিয়ে আমরা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
ব্রেকিংনিউজ/এসপি