বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে যাত্রা করেছেন ফুটবল দুনিয়ার চিরস্মরণীয় জাদুকর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত এই মহাতারকার জীবনাবসানে সামনে এলো তার প্রিয় বন্ধু দীর্ঘদিনের পথচলার সঙ্গী সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী নেতা ও কিউবান প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নাম।
একটু খেয়াল করে জানা গেল সেই কারণটা। গতকাল ২৫ নভেম্বর ফুটবলের ঈশ্বর ম্যারাডোনা যখন মারা গেলেন তখন সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া পালন করছিলেন ক্যাস্ত্রোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর মারা গিয়েছিলেন ক্যাস্ত্রো। দুই পরম বন্ধুর একই দিনে পৃথিবী থেকে বিদায়ের এ ঘটনা যদিও নেহায়েতই কাকতালীয়।
ম্যারাডোনার চ্যালেঞ্জিং জীবনে বহুবার দুঃসময় হানা দিয়েছে। প্রগাঢ় সম্পর্কের টানে প্রতিবারই বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্যাস্ত্রো। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা যখন প্রথমবার কিউবা যান তখনই ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম দেখাতেই ক্যাস্ত্রোকে নিজের বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি উপহার দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা।
ফুটবল থেকে বিদায় নেয়ার পর অতিরিক্ত মাদক সেবনে প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন এই ফুববল কিংবদন্তি। চারপাশ থেকে তখন কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যাচ্ছিল। কিন্তু বন্ধুকে এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে যাননি বিপ্লবী ক্যাস্ত্রো। কিউবার ‘লা পেড্রেরা’ ক্লিনিকে ম্যারাডোনার রিহ্যাবের ব্যবস্থা করে দেয়া হলে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।
এক সাক্ষাৎকালে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘ও (ক্যাস্ত্রো) তখন এগিয়ে না আসলে আমি হয়তো আর বাঁচতামই না। তখন ঠিক এতটাই খারাপ ছিল আমার শারীরিক অবস্থা।’ এ কারণেই বন্ধুকে সবসময় সাথে রাখতে নিজের বাহুতে ক্যাস্ত্রোর ছবি ট্যাচু করে রেখেছিলেন ম্যারাডোনা।
ক্যাস্ত্রোর আগ্রহে দীর্ঘ ৪ বছর কিউবায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ওই সময়গুলোতে দুজনের মধ্যে খেলা, রাজনীতি, সমাজ ও বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলতো। প্রাণের বন্ধুকে মাদকাসক্তি থেকে সরিয়ে আনতেও ক্যাস্ত্রোর চেষ্টার কোনও কমতি ছিল না।
ম্যারাডোনা প্রসঙ্গে ক্যাস্ত্রো একবার বলেছিলেন, ‘ডিয়েগো আমার গ্রেড ফ্রেন্ড। কোনও সন্দেহ নেই যে, ও অসাধারণ এক অ্যাথলেট। আর কিউবার সঙ্গে ম্যারাডোনা কোনও পার্থিব লাভ ছাড়াই বন্ধুত্ব রেখে গেছে।’
২০০৬ সালে ক্যাস্ত্রো যখন মারা গেলেন তখন ম্যারাডোনা বন্ধুবিয়োগের আবেগ ঢেকে রাখতে পারেননি। প্রচণ্ড কেদেছিলেন। ওইসময় বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যাস্ত্রো সম্পর্কে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘ও (ক্যাস্ত্রো) আমার কাছে আমার আরেকটা বাবার মতো ছিল। আর্জেন্টিনায় যখন আমার সব দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তখন ও আমাকে কিউবায় জায়গা দিয়েছে।’
ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুর পর কিউবায় উড়ে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় শোকে। সেই শোকসভায় ম্যারাডোনা তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমার বন্ধু ফিদেলকে বিদায় জানাচ্ছি। তবে আমি সব সময় কিউবার মানুষের পাশে থাকতে চাই।’
গতকাল হ্যার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে ৬০ বছর বয়সে মারা যান ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করা এই কিংবদন্তি ১৯৮৬ সালে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন।
ব্রেকিংনিউজ/এমআর