আল নাহিয়ান খান জয়। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামের সন্তান তিনি। বাবা আব্দুল আলী খান একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনে আইন বিভাগে ভর্তি হন আল নাহিয়ান খান জয়। বর্তমানে তিনি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করছেন।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাদ পড়লে জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের প্রায় অর্ধকোটি শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্ত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তার কথায় উঠে এসেছে দেশের চলমান ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা এবং আগামী দিনের পরিকল্পনাসহ নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়। সাক্ষাৎকারে যুক্ত ছিলেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন। ছিলেন ফটোগ্রাফার সালেকুজ্জামান রাজীব ও ভিডিওগ্রাফার মির্জা সম্রাট।
ব্রেকিংনিউজ : দেশের চলমান ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আল নাহিয়ান খান জয় : শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাঙালি জাতির ইতিহাস, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করেন, সেখানে ছাত্রলীগের অবদান কিন্তু সব জায়গায় আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও এদেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগের রাজনীতির পথচলা। সে পথচলার বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে সকলের একটি পজেটিভ দিক আছে। সেটা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি করে। যদিও কিছু সংগঠন আছে; সেখানে শিক্ষার্থীদের লেশমাত্র নেই। আমরা বলবো, যাদের বয়স ৪০, ৪৫, ৫০ তারা অবশ্য শিক্ষার্থীদের মনোভাব বুঝে কাজ করতে পারবে বলে মনে হয় না। যেমন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তাদের একটা গঠনতন্ত্র নেই। সেখানে ‘শিক্ষার্থী’ বলে কোনও শব্দ নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ জনপ্রিয়তার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে; এটুকু বলতে পারি।
ব্রেকিংনিউজ : ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে কিনা?
আল নাহিয়ান খান জয় : আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি যৌক্তিক দাবি-দাওয়াতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে। কেউ যদি অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের পাশে তো ছাত্রলীগ থাকবে না । ছাত্রলীগ সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার যে লক্ষ্য ছিলো সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় কাজ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোকবর্তিকা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা দেখেন, করোনাকালীন ছাত্রলীগ সারা দেশে গণমানুষের পাশে থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জাতীয় ক্রান্তিলগ্ন যখনই শুরু হয় তখনই ছাত্রলীগ সামনে থেকে ভূমিকা রাখে। ছাত্রলীগ কখনো বসে থাকা সংগঠন নয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যেমন কাজ করে; মানুষের পাশে থেকে সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এগিয়ে যাচ্ছে।
ব্রেকিংনিউজ : সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় করোনার টিকা পৌঁছে দিতে ছাত্রলীগের কোনও ভূমিকা থাকবে কি-না?
আল নাহিয়ান খান জয় : করোনার টিকা আমদানি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি অবিস্মরণীয় কীর্তি। করোনার টিকা নিয়ে আসার জন্য আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপাকে ধন্যবাদ জানাই। করোনার টিকা আসার শুরুর পর্যায়ে আপনারা দেখেছেন যে, বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে এটাকে অন্যখাতে নেয়ার চেষ্টা করেছে কিছু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। আজকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনার টিকা নিচ্ছে। করোনার টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি করেছে এবং বিনামূল্যে মানুষকে দিচ্ছে। সেই নিয়ম-নীতি অনুযায়ী বর্তমান সরকার করোনার টিকা দিচ্ছে। এ মহাযজ্ঞে সরকারের পাশে থেকে ছাত্রলীগ যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে যাবে। যেকোনও ‘গুজব‘ প্রতিরোধেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
ব্রেকিংনিউজ : সর্বশেষ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েও একটা বিতর্ক উঠেছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আল নাহিয়ান খান জয় : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর বৃহৎ এক ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সদস্য সংখ্যা ৩০১ জন। সংগঠনে আমরা কিন্তু সকলকে পদায়ন করতে পারি না। ৩০১ সদস্য নগণ্য; বেশি সংখ্যা না। এক্ষেত্রে অনেকেরই মনে কষ্ট থেকে যায়। আর তখন অনেকেই চায় সংগঠনকে বিতর্কিত করতে। আমরা কিন্তু এই সংগঠনের নেতৃত্বের জায়গায় বলেন বা প্রতিনিধিত্বের জায়গায়, আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংগঠনকে গতিশীল করার পাশাপাশি জাতির পিতার আর্দশ ধারণ করে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি। বির্তকের জন্য অনেকে অভিযোগ তুলেছেন; এগুলোর সত্যতা নেই। এসব অভিযোগ শুধুমাত্র সংগঠনের গতিকে কমিয়ে দেয়ার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা-গুজব ছড়িয়েও সংগঠনের গতি কমানোর চেষ্টা করছে। আমরা যাচাই-বাছাই করেই সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে আসি। শুধু অভিযোগ থাকলে হবে না, অভিযোগের সত্যতাও থাকতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ : সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী কেলেঙ্কারিতেও ছাত্রলীগের নাম জড়াচ্ছে, এতে অবশ্যই সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কোনও নির্দেশনা কিংবা বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে কি-না?
আল নাহিয়ান খান জয় : ছাত্রলীগ নারী কেলেঙ্কারি করছে বিষয়টি সেটা নয়; বিষয়টি হচ্ছে আমাদের মনের কুবৃত্তি। আমি যদি খারাপ থাকি; সে দায়-দায়িত্ব কি আমার সংগঠন নেবে? অবশ্যই না। আমার মন যদি খারাপ থাকে মনে যদি কুবৃত্তি থাকে, আমি যদি খারাপ চরিত্রের হই সে দায় ও দায়িত্ব অবশ্যই আমার। সে দায়-দায়িত্ব কিন্তু আমার বাবাও নেবে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন কখনও তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় না। তবে দু-একজন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে বা বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন সময় কিন্তু ব্যবস্থা নিই। সেটা আপনারাও জানেন। কোনও অনুপ্রবেশকারীর কারণে যাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে, সেজন্য আমরা সবসময় তৎপর আছি।
ব্রেকিংনিউজ : আপনাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ঐহিত্য কতটুকু অক্ষুণ্ণ রয়েছে বলে মনে করেন?
আল নাহিয়ান খান জয় : গৌরব-ঐতিহ্য ও সাফল্যের সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যুগ যুগ ধরে সে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই করোনাকালীন বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। আজকে দেখেন ৩০ দিন হতে চলছে, আমাদের সমাজসেবা সম্পাদক শাহেদের মাধ্যমে সমাজসেবা সেল থেকে যেকোনও শিক্ষার্থীর জন্য উপহারসামগ্রী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঠান্ডার কাপড়, শাল, হুডি, টি-শার্ট তুলে দেয়া হচ্ছে। করোনাকালীন বিভিন্ন ধরনের কাজ করার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি, আমাদের সংগঠনের ঐতিহ্য ধারণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
ব্রেকিংনিউজ : একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে আপনি ও আপনার সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, পরে ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্তও হয়েছেন। আপনাদের সময়ে সংগঠনকে কতটুকু গুছিয়ে আনতে পেরেছেন?
আল নাহিয়ান খান জয় : আপনারা জানেন যে, আমরা একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পেয়েছিলাম। আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক যখন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করি; তার ২ মাস পরে, জানুয়ারি ৪ তারিখ ২০২০ সালে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী আমাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন। ছাত্রলীগের ইতিহাসে এটিই প্রথম। আমরা কিন্তু আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে সবসময় কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। দোষ-ত্রুটি আমাদের নেই তা নয়, আমরা চেষ্টা করি যেন দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে পারি। ২-১ জন অনুপ্রবেশকারী চেষ্টা করে আমাদের গতি কমিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা সবসময় কাজ করে যাবো, সংগঠনকে নিয়ে যাতে কেউ কোনো যড়যন্ত্র করতে না পারে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠছে। জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। করোনাকালীন আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাহিরে মানবিক কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের কমিটিতে আসার পর মূল চ্যালেঞ্জ ছিলো, বিতর্কিতদের বাদ দেয়া এবং যারা অনেক দিন ধরে রাজনীতি করে কমিটিতে তাদের পদায়ন ও মূল্যায়ন করা। সে কাজটি আমরা করতে পেরেছি বলে মনে করি। আমরা চেষ্টা করেছি কাজ করার, বাকিটা আপনারা মূল্যায়ন করবেন। সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।
ব্রেকিংনিউজ : আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
আল নাহিয়ান খান জয় : এই মুহূর্তে আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। ভবিষ্যতেও কাজ করতে চাই, কাজের এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
ব্রেকিংনিউজ : ভালো লাগলো, সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আল নাহিয়ান খান জয় : আপনাকে এবং ব্রেকিংনিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ।