পৃথিবী নামের এই গ্রহটিতে মানুষের চেয়ে স্বপ্নবাজ আর কে আছে? কারও কারও স্বপ্নের ভ্রুণ একদিন মহীরুহে পরিণত হয়, আবারও কারও কারও স্বপ্ন অঙ্কুরের বিনষ্ট হয়। সেই স্বপ্নবালকদেরই একজন মো. ইয়াছিন। বয়স ১৪। স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে বিমানের পাইলট হবে। দেশ-দেশান্তর ঘুরে বেরাবে নীল আকাশের বুক চিরে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেলো। ইয়াছিন এখন ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে রাজধানীর বুকে।
৭ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর ভৈরব থেকে শূন্য হাতে এসেছিলেন এই ইট-পাথরের স্বজনহীন শহরে। নিজস্ব জমিজমা এবং ঘরবাড়ি যা ছিল অসুস্থতার কারণে সব বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। ইয়াছিনের মা গাজীপুরে পিনাকী গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইয়াসিনের স্বপ্নের পালটাতেও ছেদ পড়ে। এখন তার স্বপ্নের পাল শতচ্ছিন্ন। স্বপ্নটাও এখনও নেমে এসেছে মাটিতে। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় ইয়াছিনের স্বপ্ন এখন বড় হয়ে মায়ের জমানো দুই লাখ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি কিনে চালাবে।
সম্প্রতি ইয়াছিন নামের সেই কিশোর তার দুঃখ, কষ্ট ও স্বপ্নের কথাগুলো নিয়েই ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি এর মুখোমুখি হয়েছিল। তার সেই কথাগুলো তুলে এনেছেন ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।
ব্রেকিংনিউজ: কেমন আছো? আজ বাদাম বিক্রি কেমন হচ্ছে?
ইয়াছিন: জ্বি, ভালো আছি। আজ ভালোই বিক্রি করেছি। এখন পর্যন্ত ৪০০ টাকার বাদাম বিক্রি করেছি।
ব্রেকিংনিউজ: পড়ালেখা কতদূর করেছো? পরিবারে কে কে আছে?
ইয়াছিন: আমি ফাইভ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমার বয়স যখন ৭ তখন বাবা মারা যায়। এখন শুধু মা আছে।
ব্রেকিংনিউজ: পড়ালেখা বাদ দিলে কেন?
ইয়াছিন: আমার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাবের কারণে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বাদাম বিক্রি শুরু করি। ছোটবেলায় আমার একটা স্বপ্ন ছিলো আমি আকাশে প্লেন চালাবো, পাইলট হবো। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পরে সেই স্বপ্ন আমার স্বপ্নই থেকে গেলো। সুযোগ থাকলে আমি আবার পড়ালেখা শুরু করতাম। কিন্তু সেই সুযোগ যে সবার কপালে আল্লাহ্ লেখে রাখে না।
ব্রেকিংনিউজ: তোমরা গাজীপুর থেকে ঢাকা কিভাবে এলে?
ইয়াছিন: আমার বাবা-মায়ের কোনো সন্তান হতো না। অনেক বছর পরে আমার জন্ম হয়। আমার জন্মের পর থেকেই আমার পেট ফুলে থাকতো, কিছু খেতে পারতাম না। এরপর আমার চিকিৎসার জন্য আমাদের বাড়িসহ জমিজমা সব বিক্রি করে দেয় আমার বাবা। সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসার পর আমি ভালো হই। ভালো হওয়ার পর গাজীপুরে থাকার মতো কোনো জায়গাও ছিল না আমাদের। তখন আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। তারপর একটু বড় হয়ে আমি বাদাম বিক্রি শুরু করি।
ব্রেকিংনিউজ: বাদাম আর ছোলা বিক্রি করে প্রতিদিন কেমন আয় হয়?
ইয়াছিন: সব দিন সমান হয় না। কোনও কোনও দিন ৬০০, ৭০০, ৮০০ টাকা হয়। আবার কোনও কোনও দিন আরও কম। একেক দিন একেক রকম।
ব্রেকিংনিউজ: মাসে থাকা-খাওয়া কেমন খরচ হয়?
ইয়াছিন: প্রতিদিন তিন বেলা খেতে ১০০ টাকা খরচ হয়। আর থাকা খরচ মাসে ১ হাজার টাকা।
ব্রেকিংনিউজ: বড় হয়ে তোমার স্বপ্ন কি?
ইয়াছিন: আমার মা চাকরি করে আমার জন্য দুই লাখ টাকা ব্যাংকে রেখে দিয়েছে। আমার মা বলেছে আমি যখন বড় হবো তখন ওই টাকা দিয়ে আমাকে একটা সিএনজি কিনে দেবে। তখন আমি আর আমার মা আমাদের গ্রামে চলে যাবো। আর সিএনজি চালিয়ে মাকে খাওয়াবো। মাকে আর তখন কষ্ট করতে হবে না।
ব্রেকিংনিউজ: তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইয়াছিন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার এই খবরটি ছাপানো হলে আমি কিভাবে দেখবো?
ব্রেকিংনিউজ: তোমাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। ভালো থেকো।
ব্রেকিংনিউজ/টিটি/এমআর