বই মেলায় নতুন লেখকরা নিজেদের তুলে ধরেন। নতুনদের পাশাপশি পুরনো লেখকরাও নিজেদের লেখা গল্প-কবিতা ও অনুবাদ, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখে হাজির হন বই মেলায়। লেখকদের পাশাপাশি বই মেলায় নতুন নতুন প্রকাশনা সংস্থাও নিজেদের সেরাটা নিয়ে হাজির হন । অমর একুশের বই মেলায় এবার একেবারে নতুন প্রকাশণা প্রতিষ্ঠান ‘শুদ্ধপ্রকাশ’। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিরণ্ময় হিমাংশু। ‘শুদ্ধপ্রকাশ’ নিয়ে হিরণ্ময় হিমাংশু’র সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন ব্রেকিংনিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাহাত হুসাইন।
ব্রেকিংনিউজ: মেলায় অসংখ্য বই প্রকাশ হয়, কিন্তু মানসম্মত বই কম- এর কারণ কী মনে করেন?
হিরণ্ময় হিমাংশু: আমাদের অধিকাংশ প্রকাশক ছাপাখানার ম্যানেজারের দায়িত্বটা পালন করেন; অনেকেই আবার অন্য প্রকাশকের আইডিয়া কপি পেস্ট করেন। মৌলিক পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের দিকে মনোযোগ কম থাকে। এখানে সৃজনশীল চিন্তার স্থবিরতার সঙ্গে পুঁজি বিনিয়োগের ঝুঁকির বিষয়টাও আছে। যেহেতু আমরা সস্তায় টাকা উপার্জন করতে চাই। এজন্য এখানে মানসম্মত সৃজনশীল বই কম চোখে পড়ে। আরেক শ্রেণির মৌসুমী লেখক আছেন যারা গাঁটের টাকার গরমে শুধু বইমেলায় বই প্রকাশ করতে ও লেখক তালিকায় নাম লেখাতে আগ্রহী থাকেন ফলে বইমেলা জুড়ে কিছু মানসম্মত বই হলেও অধিকাংশই আবর্জনা সৃষ্টি হয়।
ব্রেকিংনিউজ: আগের থেকে মেলার আওতা বেড়েছে। এর মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
হিরণ্ময় হিমাংশু: এটা মেলার ভালো দিক, পাঠকরা মেলায় এসে স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে পারছেন, বই দেখে ক্রয় করতে পারছেন। ‘লেখক বলছি মঞ্চ’ ও ‘গ্লাস টাওয়ার’কে মেলায় নতুন সংযোজন। কিন্তু তারপরও মেলার প্লানটা কিছু প্রকাশকের জন্য বেদনাদায়ক হয়। যেমন ধরুন, পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতাই বলবো। পূর্ব দিকে একটা বের হওয়ার গেট না থাকায় সেদিকের স্টল পর্য়ন্ত অধিকাংশ পাঠক যান না। আমার মনে হয় সেদিকে প্রকাশকগণ কিছুটা বঞ্চিত হন। যেহেতু স্টল বিন্যাসটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় তাই পূর্বদিকে একটি বের হওয়ার গেট থাকলে ভালো হতো। সেই সঙ্গে স্টল বিন্যাসের সঙ্গে মেলার আওতাভূক্ত গাছগুলোর কথাও চিন্তা করা উচিৎ; যেখানে প্রতি বছরই তাদের উপর মনে হয় অত্যাচার করা হয়। গাছগুলো বাদ দিয়েও স্টল বিন্যাসের কথা চিন্তার করার সুযোগ ছিল। আশা করবো ভবিষ্যতে কতৃপক্ষ এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
ব্রেকিংনিউজ: এবারের মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য কী কী বই আনছে শুদ্ধ প্রকাশ?
হিরণ্ময় হিমাংশু: শিশু-কিশোরদের জন্য অরুণ কুমার বিশ্বাসের লেখা উপন্যাস ‘লালু বিলুর কাণ্ডকীর্তি’, হাসান রাজীবের ছড়ার বই ‘দিন কেটে যায় ছন্দে’, অঞ্জন শরীফের ‘ফুলপরীদের সাথে’; সাজ্জাক হোসেন শিহাবের শিশুতোষ গল্পের বই ‘নতুন রাজা’, ‘সাদাপরীর দেশে’ ও ‘চোর-ভূতের গল্প’; অমর্ত্য রূপাইর গল্প ‘ভূত বলে কিছু নেই’।
ব্রেকিংনিউজ: প্রকাশনী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যদি বলতেন?
হিরণ্ময় হিমাংশু: বই প্রকাশের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি। যেমন ধরুন, ‘কিশোরবেলা গ্রন্থমালা’ তো দৃশ্যমান, এবং এটি চলমান থাকবে। এর পাশাপাশি ‘জেলাভিত্তিক ঐতিহ্যের গ্রন্থমালা’ প্রকাশের কাজ করছি; এই গ্রন্থমালার আওতায় প্রতিটি জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যর উপর পাঁচটি করে বই প্রকাশ করবো। সেই সঙ্গে ‘চিরায়ত সাহিত্যের শুদ্ধপাঠ’ শিরোনামে চিরায়ত সাহিত্য নিয়ে কাজ করছি; এক্ষেত্রে প্রথম গল্প, প্রথম কবিতা, প্রথম উপন্যাস, প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে; এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের সুলভ সংস্করণ আমার প্রকাশ করবো। এক্ষেত্রে পাঠকের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে ‘রবীন্দ্রনাথের রচনা সমগ্র’ আমরা দশ হাজার টাকায় পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার জন্য কাজ করছি। কারণ যেগুলো এখন বাজারে আছে সেগুলোর দাম পঁচিশ হাজার টাকার বেশি। এছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বছর উপলক্ষে ১০টি বিশেষ গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
ব্রেকিংনিউজ: আপনার প্রকাশনের বিশেষত্ব কি?
হিরণ্ময় হিমাংশু: আমি ছাপাখানার ম্যানেজারের কাজটা করতে চাই না। আমি চাই মৌলিক বিষয়ে পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করে বই প্রকাশ করতে। যেমন আমি প্রথম বছরেই একটি বিশেষ কাজ শুরু করেছি- আমাদের গুণীজনদের শৈশব-কৌশরের জীবন নিয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থমালা ‘কিশোরবেলা’ শিরোণামে একাধিক বই প্রকাশ করার। কেননা এই ফিরে দেখা কৈশোর আসলে ভালো করে নিজেকে চেনা ফের। কতটুকু বহন করা গেল নিজেকে, মানুষের কিশোরবেলার কাছে লেখা আছে সেই কাহিনি। জীবন কিসের ওপর দাঁড়িয়ে এতদূর এলো, সেটা দেখারই আয়োজন এই কিশোরবেলা সিরিজ। চলতি বইমেলায় এই সিরিজের ১০টি বই আসার কথা থাকলেও শেষ পর্য়ন্ত আটিটি বই আসবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই আরও অনেক গুণীজনের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। শুধু সাহিত্যিক নন, সব সেক্টরের বিখ্যাতজনদের নিয়ে এই গ্রন্ধমালার কাজ চলমান থাকবে।
ব্রেকিংনিউজ: এখন পর্যন্ত আপনার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা কত?
হিরণ্ময় হিমাংশু: এ পর্য়ন্ত মোট ৭০টি বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে আত্মজীবনীমূলক ‘গ্রন্থমালা কিশোরবেলা’ লিখেছেন- যতীন সরকার, কামাল লোহানী, রামেন্দু মজুমদার, শওকত আলী, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, মাকিদ হায়দার, আমীরুল ইসলাম ও খন্দকার মাহমুদুল হাসান। এছাড়াও আছেন কবি মতিন বৈরাগী, অরুণ কুমার বিশ্বাস, মজিদ মাহমুদ, ইসমত শিল্পী, খান চমন-ই-এলাহি, প্রতীক ইজাজ ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের অনুরূপ আইচ, মাহতাব হোসেন, রবিউল করিম মৃদুল, হাবীব ইমন, সাজ্জাক হোসেন শিহাব, আহমেদ উল্লাহ্, মফিজুল হক, সেবক বিশ্বাস, নিলয় রফিক প্রমুখ। আছেন ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ক্ষুদে লেখক অমর্ত্য রূপাই।
ব্রেকিংনিউজ/আরএইচ/জেআই