‘পাকিস্তানের দালাল ৭১ ও ৭৫ এর খুনিরা চক্রান্ত ছাড়েনি। সুযোগ পেলেই দেশের ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বঙ্গবন্ধুর ওপর আক্রমণ করে। আজ আমরা যখন মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করছি, তখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষও পালন হচ্ছে। আর এই শতবর্ষের ভেতরে এ বিজয় মাসকে সামনে রেখে কিছু রাজনৈতিক মোল্লা হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও দেশের সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুঙ্কার দিচ্ছে। যা চক্রান্তের রাজনীতিরই অংশ।’
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান ও শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এসব কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, তারা ৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর খুনি, ৭১ সালের খুনি রাজাকারদের দোসর। তারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয় বার হত্যা করতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ওপর আক্রমণ মানে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ওপর আক্রমণ। রাজনৈতিক মোল্লারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ছুরি চালাতে চায়।’
ইনু আরও বলেন, ‘ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি দেয়ার মাধ্যমে এরা তিন ধরণের আইনী বরখেলাপ করছে- প্রথমত, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি প্রদান, দ্বিতীয়ত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে সমাজে অশান্তি তৈরির চক্রান্ত ও উস্কানী দেয়া এবং আর তৃতীয়ত ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে মিথ্যাচার করা, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মের অনুভূতির ওপর আঘাত হানছে। এ আইনী বরখেলাপের দায়ে অবিলম্বের তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুঙ্কার দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ধামা চাপা দিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে চায় তাদেরকে এ বিজয়ের মাসে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।’
সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের দালাল এ রাজনৈতিক মোল্লারা দেশের সংবিধান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অস্বীকার করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটা দেশ দ্রোহীতার সামিল, প্রচলিত আইনের লংঘন। এদের ক্ষমা করা যায় না, এদের কোনও ছাড় নেই। অবিলম্বে এ সকল রাজনৈতিক মোল্লাদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের আর কোনও দিন কেউ এ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলার মাটিতে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত সহ্য করা হবে না। এদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে এবং লড়াই জারি রাখতে হবে। তাই মুক্তিযোদ্ধা দিবসে আমাদের ঘোষণা, চক্রান্ত যতই হোক ২০০৯ সালের পর যেভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ফাঁসি হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ভাস্কর্য বিরোধী রাজনৈতিক মোল্লাদের চক্রান্ত রুখে দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে, সুশাসনের পথে ও সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার কথা এবং বিজয় দিবসে বিজয় দিবসের কথা হয়। তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের যে বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা তা বলার জন্য ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ইনু।
তিনি বলেন, ‘আমরা ছুটি চাইনা, আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বাণী দিবেন। মন্ত্রীরা মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে ফুল দিবেন এবং স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা হবে। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখতে ২০০৪ সাল থেকে ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি সফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুন্নবী, দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মাইনুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদ নেতা কাজী সিদ্দিকুর রহমান, লেলিন আকাশ, শিরীন শিকদার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-না) সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ/আরএইচ/এসআই