পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা ও কর্মযজ্ঞ এই গ্রহটিতে কম্পন তৈরি করে। অর্থাৎ গাড়ি চালানো, ভ্রমণ, খনন, নির্মাণ, শিল্প এবং এমনকি খেলাধুলার আয়োজনগুলো উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ভূমিকম্পের কম্পন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
কিন্তু গেল কয়েকমাস ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পৃথিবীর বিশাল কর্মযজ্ঞকে অনেকাংশেই থামিয়ে দিয়েছে। আর তাতে করে পৃথিবী নামের গ্রহটি বর্তমানে অ্যানথ্রোপোজেনিক সিসমিক শব্দের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে। সহজ কথায়, লকডাউনে মানুষ যতই ঘরবন্দি হয়েছে বাইরের জীবনযাত্রা ততই কমেছে। তাতে করে পৃথিবীকে অনেক কম বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে।
ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সিসমোলজিস্ট স্টিফেন হিকস বলেছেন, ‘আমরা ক্রমাগত পৃথিবীর গর্জন পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এটা নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায়। সপ্তাহ শেষে ও রাতে কিছুটা শান্ত থাকে। পাশাপাশি ক্রিসমাস, নববর্ষ ও ছুটির সময়গুলোতে কম্পন কম থাকলেও কখনোই একেবারে থেমে যায় না। এমনকি লকডাউনেও মানুষের আওয়াজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে কয়েক মাস আগে থেকে ৫০ শতাংশে নেমে আসাটা আগে দেখা যেকোনও সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।’
গবেষকরা বলছেন, লকডাউনের কারণে মানবসৃষ্ট ভূকম্পন বিশ্বজুড়ে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিজ্ঞানীরা এখন পরিষ্কারভাবেই সিসমিক সিগন্যাল শুনতে পাচ্ছেন। এসব প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে রয়েছে ছোট ভূকম্পন কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত।
পৃথিবীর ১১৭টি দেশের ২৬৮টি সিসমিক মনিটরিং স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এগুলো সাধারণত মানবসৃষ্ট কম্পনের জন্য প্রাকৃতিক কম্পন রেকর্ড করতে পারে না। গেল জানুয়ারিতে চীনে করোনার বিস্তার শুরু হওয়ার পর তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ঠিক তখন থেকেই শান্ত হতে থাকে পৃথিবীর কম্পন।
সম্প্রতি কোনও কোনও দেশে লকডাউন শিথিল হলেও পৃথিবীর কম্পন এখনও ততটা বাড়েনি। তাতে করে বিজ্ঞানীদের ধারণা, করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মানুষ এখনও ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
ব্রেকিংনিউজ/এমআর